শেখ মামুন হোসেনঃ
শিরোনাম দেখে হয়তো অনেকের চোখ কপালে উঠে যাবে!কিন্তু এটাই তো বাস্তব। মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় বা ভূমিষ্ট হয়েই তো সেক্স বা লিঙ্গ বৈষম্য শিখে আসিনি। মনে প্রশ্ন জাগছে কে শেখালেন তাহলে! হ্যাঁ। জাগবেই তো, কারণ আমরা কখনো ভাবিনি কে শিখিয়েছে।
কিন্তু আজ আমরা এটা ভাবছি কেন ধর্ষণ বেড়েই চলেছে, কেন সব কিছুতেই লিঙ্গ বৈষম্য ডানা বাঁধছে! আমি বলি আমাকে কে শিখিয়েছে। আমার সমাজ আমাকে সেক্স কি সেটা শিখিয়েছে, আমার সমাজ আমাকে বারবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে লিঙ্গ বৈষম্য। নারীরা অসহায় দুর্বল তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ো, তাদেরকে সব কিছুতেই হেয়-প্রতিপন্ন করো! কারণ তারা শক্তিতেও দুর্বল।
হয়তো মনে প্রশ্ন জাগছে তারা দুর্বল বলেই কি তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়তে হবে! হ্যাঁ। কিন্তু কেন, তারা দুর্বল বলেই কি তাদের সাথে এমনটা করতে হবে, তারা অসহায় বলেই কি তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়তে হবে! সেক্স তো সামাজিক জীবনের একটা অংশ, এটা তো সমাজের কাছ থেকেই শিখবে। এখন আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসি।
নারীদের কিছুই করার নেই বলেই তাদের সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। তারা মানুষ তাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তবে পুরুষ যেভাবে বলবে সেভাবেই থাকতে হবে। কারণ তারা যতটা দুর্বল তার চেয়ে বেশি দুর্বলতা প্রকাশ করে এবং নিজেদেরকে সহজলভ্য করে তুলেছে। আর আমরা জানি দুর্বলদের অধিকাংশ লোক সুযোগে তাদের ব্যবহার করে। আপনার কথায় যুক্তি আছে। সেক্স বিষয়টা সমাজ আমাদের শেখাবে।
কিন্তু বর্তমানে যেটা শিখাচ্ছে সেটা তো যুব সমাজককে ক্রমেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সংস্কৃতি রক্ষা করার পরিবর্তে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আপনি বলছেন ধর্ষণ সমাজের কারণে বেড়ে চলেছে, সেটা কিভাবে?
দেখুন আমরা জন্মগ্রহণ করেই বুঝিনি কে ছেলে আর কে মেয়ে। সাত আট বছর বয়স থেকে বুঝতে শিখি বাবার মতো দেখতে তারা ছেলে আর মায়ের মতো দেখতে তারা মেয়ে। এটাও কিন্তু সমাজ আমাদেরকে শিখিয়েছে। তখন সেক্স কি সেটা আমরা জানি না। তখন আমরা এটাই বুঝেছি সবাই মানুষ। পনেরো ষোল বছর বয়স থেকে আমাদের শারীরিক পরিবর্তন হয়। এরপরেও আমরা এটা বুঝি না নারী কি, তাদের সাথে কি করতে হয়? কিন্তু বর্তমানে সমাজে সাত আট বছর বয়সের ছেলে মেয়েরা শুধু এটাই বুঝেনি তারা বিপরীত লিঙ্গ, তারা এটাও খুব ভালো করে রপ্ত করেছে তারা শুধু বিপরীত লিঙ্গই নয় তাদের মধ্যে সেক্স করা যায়।
বর্তমান সমাজ এটাই শিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু সমাজ কিভাবে এই শিক্ষা দিচ্ছে? বর্তমান সময়ে ফেসবুক, ইউটিউব, মেসেঞ্জার, লাইক অ্যাপ্স, ইমু, টিকটক ইত্যাদি অ্যাপ্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে এর সাথে নাটক, সিনেমাতে অশ্লীল কথা, আইটেম সং, অশ্লীল ভঙ্গি আর স্কুল জীবনের প্রেম ব্যতীত কোনো ছবিই যেন পূর্ণাঙ্গরূপ পায় না।
এই ধরনের প্রযুক্তি আর সংস্কৃতির মাধ্যমে সেই শিক্ষাটাই দেওয়া হচ্ছে। এগুলো ব্যবহারের যতটা না উপকার হচ্ছে এর চেয়ে অধিক গুণ ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষা এবং সংস্কৃতি ধ্বংস করছে, শুধু তাই নয় পুরুষ জাতিকে নারী জাতির উপর লালায়িত করে তুলছে। কিভাবে নারীদের উপর লালায়িত করে তুলছে? এই ধরনের অ্যাপ্সের মাধ্যমে অনায়াসে অশ্লীল ভিডিও তৈরী করে প্রচার করা হচ্ছে। যেটা দেখে কিশোর-কিশোরীরা বাজে কাজে উৎসাহিত হচ্ছে (নতুন নতুন সম্পর্ক তৈরী, বিচ্ছেদ, প্রলোভন, কাজে অনিহা, হতাশাগ্রস্থ ইত্যাদি)এবং কিশোরদেরকে অদৃশ্যভাবে বলে দিচ্ছে কিশোরীদের দেহ তোমাদের ব্যবহারের জন্যই স্রষ্টা পাঠিয়েছেন।
অন্যদিকে নারীদের বলা হচ্ছে পুরুষ জাতি তোমাকে বন্দি করে রেখেছে, জুলুম করছে, তুমি এর বিরুদ্ধে নিজের স্বাধীনতা জাগিয়ে তুলো, তোমার শরীরটাকে নিজের মতো করে সাজাও আর তাদের গা ঘেষে চলো এবং স্বাধীনতা অর্জন করো। তারা না বুঝে সেটাই করছে।
শুনেছি নারীদেরকে সাধারণত তেঁতুলের সাথে তুলনা করা হয়। সেই দিক থেকে একটা কথা বলছি শুনুন, একজন তেঁতুল বিক্রেতা রোজকার মতো আজও তেতুল বিক্রি করছে। হঠাৎ একজন ব্যাক্তি তার সামনে দিয়ে পরিষ্কার চকচকে দেখতে সুন্দর কিছু তেঁতুল নিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় তেঁতুল বিক্রেতার নজর পড়লো সেই তেঁতুলের উপর। সে দেখেই ক্রেতাকে গিয়ে বললো, আপনার তেঁতুল থেকে আমাকে একটু তেঁতুল দিন না। এরকম তেঁতুল কখনো দেখিনি আমার খুব খেতে ইচ্ছা করছে। ক্রেতা বললো দেখো ভাই এটা শুধু আমার পরিবারের জন্য কিনেছি তোমাকে দিতে পারবো না। একটু দিলে তো ফুরাবে না, দিন না। ক্রেতা কোনো কিছুতেই দিতে রাজি হলেন না। তখন কয়েকজন বিক্রেতা মিলে জোর করে কেড়ে নিয়ে সবাই মজা করে খেলেন এবং লোকটিকে হত্যা করলেন। যদিও একই জিনিস। এই কাজ করার কারণে তাদের ফাঁসি হয়।
ঐ রাস্তা দিয়েই পরের দিন একটি লোক কালো ব্যাগে করে তেঁতুল নিয়ে যাচ্ছেন। এমন সময় ঐ ব্যাক্তির পরিচিত একজন জিজ্ঞেস করলো কি নিয়ে যাও ভাই? উত্তর দিলেন তেঁতুল। তুমি তো অনেক ভালো তেঁতুল কিনো। এটা কয়েকজন শুনে ভাবতে শুরু করলো যদি একটু খেতে পারতাম। লোকটি কিছুটা রাস্তা এগোতেই তারা তেঁতুল গুলো কেড়ে নেয় এবং তাকেও হত্যা করে। এটা ঘটার কারণ আলগা সুন্দরটা খেয়ে ওরা খুব মজা পেয়েছে নাকি, তাহলে ঢেকে রাখাতে বেশি মজা হবে।
যারা প্রতিনিয়ত খোলা তেঁতুলের ভিড়ে থেকেও নতুন তেঁতুল দেখে জীবন রক্ষার জন্যও নিজেদের লোভ সামলাতে পারছে না। আর বাঙালি তো জম্মের পরে থেকেই দেখেছে মেয়েদের শাড়ির আবরণে দেহটাকে ঢেকে রাখতে। সেই বাঙালিই কি করে নিজের জিহ্বাকে সামলাবে। তাহলে আপনার মতে কি করা উচিত বলে মনে করেন এমন পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য?
আমি বলবো যে অ্যাপ্স গুলো বেশি প্রয়োজনীয় কাজে ভুমিকা রাখছে। সেইগুলো রেখে যথাযথ ব্যবহার করা এবং অপ্রয়োজনীয় গুলো বন্ধ করে দেওয়া। যেমন ধরুন ফেসবুকের কথা বলি, আমাদের অধিকাংশ লোকের একাধিক আইডি রয়েছে এবং যার যেমন ইচ্ছা ভিডিও তৈরী করে প্রচার করছে এবং সেটা খুলতে কোনো বাঁধা নেই। যে কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
এক্ষেত্রে সরকারের উচিত যে কোনো একাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করা এবং শুধু একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তি একটি একাউন্ট খুলতে পারবে এমন আইন করা।